ARTICLE
6 September 2024

সংবিধানের ক্রান্তিলগ্ন

VC
Vertex Chambers

Contributor

Vertex Chambers is a Bangladeshi law firm ranked as a "Top Tier" firm for Tax in The Legal500 Asia Pacific 2022 edition. Our firm specializes in tax, corporate, commercial, finance, energy and litigation matters. Each of our partners has over a decade's experience in legal practice.
গতকাল (৫ই আগস্ট) ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলের 
Bangladesh Government, Public Sector
To print this article, all you need is to be registered or login on Mondaq.com.

গতকাল (৫ই আগস্ট) ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলের যবনিকাপাত হয়েছে। আমরা গতকাল বিকেলে সেনাপ্রধানের থেকে জানতে পেরেছি একটি অন্তর্বর্তিকালীন সরকার (Interim Government) গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সাথে প্রধান রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ ছাড়া) নেতৃবৃন্দ আলোচনায় শীগ্রই বসবেন।

এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু হলো সামনের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের সাংবিধানিক অবস্থান। প্রথমেই বলে রাখা ভালো আওয়ামী লীগ এর গত ১৫ বছরের সাংবিধানিক পরিবর্তন এবং পরিমার্জনের ফলে এই প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে সংবিধানের একটি ব্যত্যয় হিসেবে পরিগণিত করার ঝুঁকি রয়েছে। তার মানে এই না যে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তিকালীন সরকার সাংবিধানিক বৈধতা হারাবে। লেখকের মতে কতিপয় সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিতে পারলে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তিকালীন সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধতা পাবে। নিম্নে পয়েন্টসমূহ আলোচ্য বিষয়ের উপর গভীরতর আলোকপাত করে-

এক, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ ভেংগে গেলে বা সংসদের অধিবেশনকাল চলমান না থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতি, কোন জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিস্থিতি বিদ্যমান আছে বলে মনে করলে, তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেকোন প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারবেন যা অন্য কোনো আইনের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন হবে। তবে ৯৩(১) অনুচ্ছেদ একটি শর্তারোপ করে যে এই রূপ কোনো অধ্যাদেশে এমন কোনো বিধান করা যাবে না যাতে সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হয়ে যায়। প্রশ্ন হলো যদি রাষ্ট্রপতি কোনো অধ্যাদেশ দ্বারা অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠন করেন তবে কি সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হয়ে যাবে?

দুই. সংবিধানের তিনটি অনুচ্ছেদ বর্তমানে রয়ছেে যা অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠনসংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির কোনো অধ্যাদেশ প্রণিত হলে রহিত হয়ে যাবে। এগুলো হলো অনুচ্ছেদ ৫৬(৪), ৫৭(৩) এবং ৫৮(৪), অনুচ্ছেদ ৫৬(৪) অনুসারে সংসদ ভেংগে যাওয়ায় এবং সংসদ সদস্যদের অব্যবহিত পরবর্তি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যবর্তিকালে যদি প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রি নিয়োগদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে সংসদ ভেংগে যাওয়া অব্যবহিত পূর্বেকার সংসদ সদস্যগণ বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে। অনুচ্ছেদ ৫৭(৩) বলে যে, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারবেন এবং ৫৮(৪) অনুসারে যদিও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ মন্ত্রীগণের প্রত্যেকের পদত্যাগের কার্যকারিত দেয়, তথাপি তাদের উত্তরাধিকারিগণ কার্যভার না গ্রহণ করা পর্যন্ত তারা স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।

তিন. যদি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠিত হয়, তবে এটি তর্কযোগ্য যে সংসদ ভেংগে যাওয়ার পর এবং সংসদীয় উত্তরাধিকারগণ না আসা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীবর্গের সদস্য পদে বহাল থাকার যে বিধান সংবিধানের ৫৬(৪), ৫৭(৩) এবং ৫৮(৪) এ রয়েছে, সেগুলি পরিবর্তিত বা রহিত হয়ে যায়, যা অনুচ্ছেদ ৯৩(১) এর দ্বিতীয় শর্তানুসারে রাষ্ট্রপতির কোনো অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে পারবেন না।

চার. এই সাংবিধানিক সমস্যা থেকে বের হবার উপায় কি? লেখকের মতে একটি উপায় আছে। সেটি হলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠন সংক্রান্ত একটি রফোরন্ডোম এর প্রস্তাব করা যার দ্বারা আগামী নির্বাচন এই অন্তর্বর্তিকালীন সরকার বাস্তবায়ন করবে কিনা সেটি জনগন সিদ্ধান্ত দেবেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯(২) অনুসারে এই রেফারেন্ডাম নির্বাচন কমিশন দ্বারা করা হবে। লেখকের মতে, যেহেতু রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশটি একটি রেফারেন্ডাম সংক্রান্ত আইন এবং রেফারেন্ডামের ব্যবহার নিয়ে সংবিধানে কিছু নেই, সেহেতু অধ্যাদেশটির দ্বারা অনুচ্ছেদ ৯৩(১) এর দ্বিতীয় শর্তের পরিবর্তিত বা রহিত সংক্রান্ত জটিলতার উদ্ভব হয় না (যদিও এই ধরনের আইনি ব্যাখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাখ্যাও করা যায়)। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, এইরূপ অন্তর্বর্তিকালীন সরকার এর ব্যাপারে রেফারেন্ডাম সংক্রান্ত কোনো অধ্যাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৩(১) এর দ্বিতীয় শর্তের পরিবর্তন বা রহিতকরণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাকে সক্রিয় করে, সেক্ষেত্রে লেখকের মতামত হলো, খসড়া অধ্যাদেশটির বৈধতার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৬ অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের অধীনে আপিল বিভাগের মতামতের জন্য প্রেরণ করতে পারেন। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝে নিঃসন্দেহে বিষয়টির সাংবধিানকি সুরাহা আপীল বিভাগের কাছে জনগুরূত্বপূর্ণ এবং জনহিতকর বলে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ যে যেকোনো সাংবিধানিক পদক্ষেপ যাতে পরবর্তিতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।

Originally published by দৈনিক ইত্তেফাক, ০৬ আগস্ট ২০২৪.

The content of this article is intended to provide a general guide to the subject matter. Specialist advice should be sought about your specific circumstances.

See More Popular Content From

Mondaq uses cookies on this website. By using our website you agree to our use of cookies as set out in our Privacy Policy.

Learn More